
একজন পেসারের আত্মকথা ;
আপনি মাঠে ক্রিকেট খেলছেন। আপনার প্রতিপক্ষের একজন ব্যাটসম্যান মাঠে আসলেন ব্যাট করতে। ৪৯ তম ওভারের ৩য় বল করার জন্য প্রস্তুত। আপনি হয়তো ভাবছেন বলটি কেমন করে দিলে বলটি ডট হবে? উইকেট আসবে? অপর প্রান্ত থেকে ব্যাটসম্যান ভাবছেন বলটি আমি কিভাবে মোকাবিলা করবো? কিভাবে খেললে রান আসবে? হুম,এমনটাই ভাবছেন আপনারা এবং আপনার সতীর্থরা। দৌড় শুরু করলেন…. আম্পায়ারকে অতিক্রম করে পপিং ক্রিজে পা রেখে ঠিক আইনেই বলটি করলেন। বলটি শটে পড়ে বাউন্স উঠলো। ব্যাটসম্যান খেলতে গিয়েও খেলতে পারলেন না। সোঁজা গিয়ে ঘাড়ে আঘাত হানলো এবং সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সবাই দৌঁড়ে কাছে গেলেন এবং দেখলেন জ্ঞান হারিয়েছে। তখনই হেলিকপ্টার যোগে হাসপাতালে নেওয়া হলো। ২ দিন চিকিৎসা চলার পর ৩য় দিনে আপনি খবর শুনলেন তিনি আর পৃথিবীতে নেই। কেমন লাগবে আপনার? কি অনুভব করবেন??
কারণ আপনার করা বলটিই যে তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
হ্যাঁ,বলছিলাম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিলিপ হিউজ এবং পেসার শন অ্যাবটের কথা। অ্যাবটের করা বাউন্সটিই যে মাত্র ২৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। অ্যাবটের জায়গায় একবার নিজেকে মনে করেন। কেমন লাগবে? তাঁর থেকে বেশি কষ্ট লেগেছিলো অ্যাবটের। অ্যাবট একজন মানুষ। ওরও খারাপ লেগেছিলো। হিউজের পরিবারের মতো অ্যাবটও তেমন ব্যথিত ছিলো। সব থেকে কষ্টটা ওরই বেশি। ৩ টা দিন কেমন কেটেছিলো তাঁর?? কি ভেবেছিলো অ্যাবট?
সেই সময়ে অ্যাবটের আত্মকথা —
হিউজ তুমি চলে গেছো আমাদের ছেড়ে। একবারো কি মনে পড়ে না আমাদের? জানি না তুমি ওপারে কেমন আছো? কি করছো? আমি জানি তুমি আমার ওপর ক্ষেপে আছো। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মারতে চাই নি। আমি তোমার জন্য অনেক প্রার্থনা করেছি ঈশ্বের কাছে। তোমার বেডের পাশে বসে অনেক কেঁদেছি। বারবার বলেছি একবার ফিরে এসো। আবার তুমি মাঠে নামো। আমি বল করবো তুমি ব্যাট করবে। কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমাকে বাউন্স দেবো না। তুমি তবুও চলে এসো। আমাকে দোষী করে চলে যেওনা। তুমি শতক করবে না? ৩৭ রান দরকার তোমার। তুমি চলে এসো। ক্রিকেট বিশ্বে তোমাকে যে অনেক প্রয়োজন। একজন ব্র্যাডম্যান দরকার। তুমি যেওনা।
তুমি আমার কোন কথায় রাখলে না ঈশ্বর, হিউজ তুমিও রাখলে না আমার কথা। একটুও চিন্তা করলে না আমার কথা,আমাদের কথা,ক্রিকেট বিশ্বের কথা। তুমি তো কথা দিয়েছিলে ১৫ বিশ্বকাপে তুমি সেরাটা খেলবে যদি সুযোগ পাও। খেললে না তুমি? দেখো তোমার দলটাই তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সবাই কত উদযাপন করেছে। সেই উদযাপনে শুধু তুমি ছিলে না। আর সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। তোমার কথা সবাই মনে করেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ড্রেসিং রুম সব সময় তোমাকে মিস করে, প্রতিটা মাঠ তোমাকে মিস করে। প্রতিটা বোলার তোমাকে স্মরণ করে। প্রতিটা শেম্পেনের বোতলের ছিপি তোমাকে মিস করে। ক্লার্কের সাথে দুষ্টমি করাটা ক্লার্ক মিস করে। প্রতিটা সাংবাদিক তোমাকে মিস করে। সাংবাদিকের কলম তোমাকে নিয়ে লেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু তুমি নেই। তোমার পারফর্ম নেই। কলম লিখবে কি নিয়ে? কাকে নিয়ে লিখবে? তোমার অপরাজিত ৬৩ রান কি কখনো পরাজিত হবে না?! তোমার শতক নিয়ে আর লেখা হবে না।
যখন আমি বল হাতে নিই তখনই তোমার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই বিশ্বাস ঘাতক বাউন্সের কথা। আমি যখন একা থাকি তোমাকে অনুভব করি। হিউজ স্বপ্নে দেখি তোমাকে। তুমি আমায় ডাকছো খেলার জন্য। ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়েছো ব্যাট করার জন্য। আমাকে তুমি বলছো বল করার জন্য। যখন দৌঁড় শুরু করি তখনই জেগে উঠি। চোখের জল ফেলি।
জানো হিউজ তোমার জন্য বিশ্বের ক্রিকেট পাগল আফসোস করে। তোমার খেলার কথা মনে করে। আমাকে অনেকেই যখন জিজ্ঞাসা করে সেই বাউন্সের কথা তখন আমি কেঁদে ফেলি। আমি তোমাকে অনেক মিস করি। জানি না আমার মতো তোমাকে এত মিস কে করে।!😒😰
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,হিউজ।
হিউজ,তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
সেই দিনের পর অ্যাবট বারবার মনে করে হিউজ কে। বারবার প্রার্থনা করে তাঁর জন্য। প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময় মিস করে হিউজকে। ওপারে ভালো থাকুক হিউজ। ওপর থেকে দেখো আমাদের ভালোবাসা।
#ফিলিপ_হিউজ
#অপরাজিত_৬৩*
প্রথম প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৭