
আজ বৃহস্পতিবার | ৩০ জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | ৩০ জিলকদ ১৪৪৩ হিজরি | দুপুর ১:৪৫
বংশ পরিচয় ব্যবহারেই প্রকাশ পায় এটি একটি চিরয়িত সত্য এবং সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু ব্যবহারে বাংলাদেশের পরিচয় কথাটা একটু অদ্ভুত শুনালেও সত্য। এই কথাটির মধ্যে পজেটিভ এবং নেগেটিভ দুইটি অর্থ বহন করে। দুটি দিক নিয়েই আলোচনা করা হবে কিন্তু আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নেগেটিভ শব্দটি কিভাবে আমাদের পজেটিভ অচরনগুলিকে ক্রমশ ম্রিয়মাণ করে ফেলছে তা নিয়ে।
বিশ্বজুড়ে আমাদের একটি খ্যাতি রয়েছে যে, বাংলাদেশীরা হচ্ছে অতিথিপরায়ন জাতি। যে কোন অন্তর্জাতিক প্রামান্য চিত্রে যা, আমাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং। এছাড়াও টংগীর তুরাগের তীরে বিশ্ব ইজতেমাও বলে দেয় জাতি হিসেবে আমাদের অতিথি পরায়নতা। ২০১২ সালে আমার চায়না সফর কালে অনেক চাইনিজ ভাইদের মুখে শুনে এসেছি বাংলাদেশের আতিথিয়তায় তাদের মুগদ্ধতার কথা। পাকিস্তানের সাথে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক যাই হোক না কেন, সাধারন ধর্মপ্রান জনগনের সাথে পাকিস্তানীদের রয়েছে এক আত্তিক সম্পর্ক। মরহুম শহীদ জুনায়েদ জামশেদ (রহঃ) তার এক লেকচার এ বলেন, “বাংলাদেশীরে পাকিস্তানিদের মাথায় তুলে রাখে (এত আদর-যত্ন), কিন্তু আমরা তাদের সাথে এক হয়ে থাকতে পারলাম না” বলে দীর্ঘ নিশাঃস ছাড়েন।
আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করেছি। ক্রিকেট বিশ্বকাপের মত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানেও ছড়িয়েছে আমাদের আতিথিয়তার দ্যুতি।
কিন্তু দেশে এবং দেশের বাহিরে আজ আমাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডিংটি আজ হুমকির মুখে। আমাদের আখলাক দিন দিন এতই নিচে চলে যাচ্ছে যে, এখন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে লগইন করতে ভয় লাগে।
ক্যাসিনো, মদক, ধর্ষন, গুম, খুন এই খবরগুলো না থাকলে হয়তো পত্রিকার পাতাগুলো হয়তো সাদাই থাকতো।
ভয়ের আরোও একটি কারন হচ্ছে, অপরাধগুলো এখন আর দেশের গন্ডির মধ্যে নেই। বিদেশের মাটিতে দিন দিন বেড়েই চলছে বাংলাদেশীদের অপরাধের মাত্রা।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার, বাংলাদেশের শ্রম বাজারের মধ্যে অন্যতম। মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারের সাথে রয়েছে আমাদের সুসম্পর্ক। কিন্তু আমাদের নিজেদের দোষের কারনে হারাতে বসেছি আমাদের সেই সম্পর্ক। আজ যেন কাতার বাংলাদেশীদের জন্য হয়ে যাচ্ছে এক বন্দী কারাগারের মতই। এর কারন গুলো খুবই সুস্পষ্ট। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আটক পরছে বিমানবন্দরে মাদক নিয়ে। জুয়ার মত জগন্য কাজ যেন নিত্যদিনের কাজ হয়ে গেছে। জুয়া শুধু জুয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই গড়িয়েছে খুনাখুনী পর্যন্ত। চেক জালিয়াতির কথা নাহয় নাই বললাম।
উপরোল্লেখিত ঘটনাগুলো কত ভয়ংকর ভাবে ছড়িয়ে পরছে তা একমাত্র কাতার প্রবাসী বাংলাদেশীরাই জানে। এইসব অপরাধগুলোর প্রভাব পরতে শুরু করছে সব জায়গায়। সাময়ীকভাবে অনঅফিসিয়ালী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশী ভিসা। চিরুনী অভিযান চলছে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আসা মানুষগুলো দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে দেশে। এই অভিযানে অনেক নিরীহ লোককেও দেশে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। কাতারে বাংলাদেশের ইমেজ আজ মহাসংকটে।
পরিস্থিতি আরও ভয়াভহ হওয়ার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছি। আমাদের হেয়ালীর সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষেরা কিন্তু বসে থাকবেনা। সমস্যা নিয়ে আলোচনার চাইতে, সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দেওয়াই জ্ঞানীর কাজ বলে মনে করি। পরের লেখায় আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তরনের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো ইন-শা-আল্লাহ্।
লেখা : রাকিব শিকদার